৫০ হাজার টাকায় মুক্তিযোদ্ধা কেনাবেচা হচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ২৮ জুলাই, ২০১৩, ০৬:১৪:৪২ সন্ধ্যা
বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কেনাবেচার হাট বেশ জমে উঠেছে। এই হাটে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় মুক্তিযোদ্ধা কেনাবেচা হচ্ছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন। আর এর বিনিময়ে তার সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পেতে পারেন বিসিএস এর মত চরম স্পর্শকাতর এবং মেধানির্ভর লোভনীয় সরকারী চাকুরী। এছাড়াও সরকারী যেকোন চাকুরী হাতিয়ে নিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যবহারের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কেনা বেচার ব্যবসাটাও তাই বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে। আর এই হাটের ইজারা নিয়েছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামের একটি সংগঠন।
রোববার দুপুরে বগুড়া প্রেসকাবে সাংবাদিক সম্মেলনে ৫০ হাজার টাকায় মুক্তিযোদ্ধা হতে গিয়ে প্রতারনার শিকার এক নারীর লিখিত বক্তব্য থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকার মোতালেব হোসেন রউফের স্ত্রী শামিম আরা জয়া সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রেজার সঙ্গে পরিচয় হয় তিন বছর আগে । পরিচয়ের সুত্রধরে এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে যে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিলে সে তার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করবে। সে আরো জানায় যে, তার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেয়া হবে। এভাবে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হিসেবে গন্য করা হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার সরকারী চাকুরী হবে।
এই প্রলোভন দিয়ে রেজাউল করিম রেজা তার কাছ থেকে বিাভন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। একপর্যায়ে সে জয়াকে বলে সে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিতে এখনই তার ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা হলেই তার বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট হবে এবং সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী পাবে।
রেজার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে গত ২০১১ সালের ১১জানুয়ারী শামিম আরা জয়া ৫০ হাজার টাকা দেন। দীর্ঘদিনেও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট না পেয়ে জয়া তার কাছে টাকা ফেরত চান। বাধ্য হয়ে রেজা চেক মারফত তাকে ১০হাজার টাকা ফেরত দেয় এবং বাঁকী টাকা না দিতে টালবাহানা করতে থাকে। এক পর্যায়ে জয়া রেজার বিরুদ্ধে মামলা করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করে। এসময় রেজা পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে। পরে আওয়ামী কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমারত আলীসহ কয়েক নেতার সুপারিশে পুলিশ রেজাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
এরপর থেকেই রেজা এবং জয়ার বিরোধ চরম আকার ধারন করে। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বেচার নামে প্রতারকদের শাস্তি দাবি করেন জয়া।
জয়ার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেজাউল ইসলাম রেজা জয়ার সঙ্গে তার পরিচয় সুত্র উল্লেখ করে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান,আসলে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য জয়া আমার নিকট ধর্না ধরেছিল। তবে এজন্য আমি তার কাছ থেকে টাকা নিইনি। আমি তার কাছ থেকে টাকাটা ধার হিসেবে নিয়েছিলাম।
উল্লেখ্য এর আগে বগুড়ায় এরকম টাকায় কেনা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে শতাধিক লোক পুলিশে চাকুরী করার তথ্য নির্ভর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল স্থানীয় এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে। সে সময় বিষয়টি নিয়ে মুখরোচক আলোচনার ডালপালা গজালেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কিংবা প্রশাসন এবষয়ে কোনই পদক্ষেপ নেয়নি।
বগুড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই এরকম একটি চক্র টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বিক্রি করছেন। এসব ভুয়া সনদের বলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী ভাগানো অনেক কর্মকর্তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আছেন ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন